কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার করার উপায়।
কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার করার উপায় কি আপনি কি জানেন। যদি না জেনে থাকেন
তাহলে আজকের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। কারণ আজকে আমরা এই
গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এজন্য
অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
সম্মানিত পাঠকগন কিডনি মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি মানবদেহের রক্ত
পরিশোধন করতে সাহায্য করে। এবং শরীরের অতিরিক্ত পানি ও বজ্র পদার্থ বের করতে
সাহায্য করে। শুধু তাই নয় শরীরের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে।
তাই কিডনি কি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও কিভাবে বুঝবো এবং প্রতিকার করার উপায় কি এ
সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, বিস্তারিত জানতে নিচে পড়তে থাকুন।
ভূমিকা
সম্মানিত পাঠক গন আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, বর্তমান বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টায়
প্রায় ছয়জনের মত মানুষ কিডনি রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করে। শুধু তাই নয় পুরো
বাংলাদেশে দুই কোটি এবং তারও বেশি মানব দেহে এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। তবে আমরা
বেশিরভাগ মানুষই জানিনা কিডনি রোগের লক্ষণ কি ও প্রতিকার করার উপায় কি। সাধারণত
৮০% মত কিডনি নষ্ট না হলে এই রোগের লক্ষণ বোঝা যায় না। যার ফলে এই রোগের
প্রতিকার করা অনেক কষ্টকর। তাই আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনি রোগের
লক্ষণ ও প্রতিকার করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।
কিডনির কাজ কি
কিডনি জিনিসটা মানব দেহে আছে এই বিষয়টা সবাই জানে। কিন্তু কিডনির কাজ কি এই
বিষয়টা অধিকাংশ মানুষই জানে না। তাই আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে কিডনির
কাজ কি এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। কিডনি সাধারণত মানবদেহের একটি
গুরুত্বপূর্ণ। যা মানুষকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিডনি মানব
শরীরের রক্ত পরিশোধন করে এবং রক্তে থাকা অতিরিক্ত ক্ষতিকর বজ্র পদার্থ বের করে
দিয়ে কিডনি কে সুস্থ রাখে। কিডনি কি কি কাজ করে নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ-
- কিডনি রক্ত পরিশোধন করে
- কিডনি রক্ত থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ বের করে
- কিডনি লবণ এবং পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
- কিডনি হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- কিডনি ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে
কিডনি এই সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে থাকে।
কিডনি রোগের কারণ গুলো কি কি
কিডনি রোগের কারণ গুলো কি কি নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ-
- ডায়াবেটিসঃ ডায়াবেটিস হওয়ার কারণে উচ্চ রক্ত শর্করা কিডনির রক্ত কণাগুলোকে নষ্ট করে ফেলে। যার ফলে কিডনি ভালোভাবে কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়।
- কিডনিতে আঘাতঃ অতিরিক্ত কিডনিতে আঘাত লাগার কারণে কিডনি রক্ত ক্ষরণ হয়। যার ফলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু মেডিসিন রয়েছে যেগুলো সেবনের ফলে কিডনি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- রক্তচাপঃ উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রক্ত কণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং কিডনি কে ড্যামেজ করে।
- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণঃ অতিরিক্ত ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কিডনি রোগের কারণ।
- কিডনিতে পাথরঃ কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণে কিডনি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পলিসিস্টিক রোগঃ এই রোগের কারণে কিডনি আস্তে আস্তে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
উপরে উল্লেখিত কারণে কিডনি ক্ষতি গ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কিডনি রোগের লক্ষণ কি কি
কিডনি রোগের লক্ষণ কি কি নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ-
- প্রস্রাব কম বেশি হওয়া
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হওয়া
- প্রস্রাবের সাথে পুঁজ বের হওয়া
- প্রস্রাবের রং পরিবর্তন
- দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হওয়া
- তল পেট ব্যথা হওয়া
- পিঠের চার পাশে ব্যাথা হওয়া
- পায়ে পানি ধরা এবং পা ফুলে যাওয়া
- মানব দেহে বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া
- ত্বকের রং ফ্যাকাসে হওয়া
- জ্বর এবং ঠান্ডা হওয়া
- ঘন ঘন পেট খারাপ হওয়া
- অতিরিক্ত দুর্বল অনুভব হওয়া
- চুল পড়ে যাওয়া
- অতিরিক্ত খিদে অনুভব হাওয়া
- মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব অনুভব হওয়া
- অতিরিক্ত ক্লান্ত অনুভব হওয়া
উল্লেখিত বিষয়গুলো কিডনি রোগের প্রধান লক্ষণ।
কিডনিতে কোন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটায়
কিডনিতে কোন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটায় নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ-
- প্রোটিন মিরাবিলিস
- স্টেফাইল লোকক্কাস
- ইন্টারোব্যাকটার
- ইকোলাই
এই সকল ব্যাকটেরিয়া কিডনিতে সংক্রমণ ঘটানোর কারণে কিডনি ড্যামেজ হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে।
কিডনি সংক্রমণ পরীক্ষা করার উপায়
কিডনি সংক্রমণ পরীক্ষা করার উপায় জানলে এ রোগের প্রতিশোধক হিসেবে চিকিৎসা করা
সম্ভব। তাই একজন ডাক্তার একজন রোগীর শারীরিক চিকিৎসা, রক্ত, ইমোজি পরীক্ষা করার
মাধ্যমে কিডনি রোগ নির্ণয় করতে পারে। সাধারণত একজন ডাক্তার একজন রোগীর
রক্তচাপ, শ্বাস, হৃদপিণ্ড, প্রস্রাব, শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার মাধ্যমে
কিডনি সংক্রমণ নির্ণয় করতে পারে। কিডনি নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তার যে সকল
পরীক্ষা করার সুপারিশ দিয়ে থাকে যথাঃ-
- কিডনি সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য একজন ডাক্তার ইমেজিং পরীক্ষা দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।
- ব্যাকটেরিয়া, সাদা রক্ত এবং লাল রক্ত কোষের জন্য ক্ষতিকর সেজন্য কিডনি সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য একজন ডাক্তার প্রস্রাব পরীক্ষা দিয়ে থাকে।
- মলদ্বারে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা সেজন্য একজন ডাক্তার কিডনি সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য মলদ্বার পরীক্ষা দিয়ে থাকে।
উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো পরীক্ষা করার মাধ্যমে কিডনি সংক্রমণ নির্ণয় করা হয়ে
থাকে।
কিডনি রোগ প্রতিকার করার উপায়
কিডনি রোগ প্রতিকার করার উপায় নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
- স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
- পর্যাপ্ত পানি পান করা
- ধূমপান না করা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- নিয়মিত চেকআপ করা
উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কিডনি রোগ প্রতিকার করা সম্ভব।
কিডনি সংক্রমণ চিকিৎসা করার উপায়
মানবদেহে কিডনি সংক্রমণ কোন পর্যায়ে রয়েছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করা
হয়ে থাকে নিচে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ-
- কিডনি সংক্রমণ চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- কিডনি সংক্রমণ রোগীর উন্নত না দেখা দিলে আই ভি চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
- কিডনি সংক্রমণ রোগীর ডিহাইড্রেশন দেখা দিলে তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো হয়।
- কিডনিতে পাথর হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে যার ফলে একজন সার্জারি ডাক্তার কিডনি সংক্রমণের চিকিৎসা হিসেবে সার্জারি করে থাকে।
উল্লেখিত চিকিৎসাগুলো একজন কিডনি সংক্রমণ রোগীর জন্য একজন ডাক্তার চিকিৎসা করে
থাকে।
কিডনি সংক্রমণের ঝুঁকির কারণ
কিডনি সংক্রমণের ঝুঁকির কারণ নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
- এইচআইভি এবং ডায়াবেটিস কিডনি সংক্রমণের ঝুঁকির কারণ।
- কিডনিতে পাথর এবং মেয়েদের জরায়ুতে ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধির করার কারণে কিডনিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে কিডনি ড্যামেজ হওয়া সম্ভব থাকে।
- গর্ভবতী মেয়েদের হরমোন পরিবর্তন হয় এবং গর্ভবতী শিশু মূত্রশয় এবং মূত্র নালীতে চাপ দেয় যার ফলে কিডনি ক্ষতি হওয়ার সময় থাকে।
- ভেসিকোরেটেরাল রিফলেক্টের প্রস্রাব সঠিকভাবে হয় না এবং মূত্রাশয় পরিবর্তন হয় যা কিডনি সংক্রমণের ঝুঁকির কারণ, অন্য পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
কিডনি সংক্রমণ রোগের প্রতিরোধ
কিডনি সংক্রমণ রোগের প্রতিরোধ কিভাবে করা যায় নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ-
- পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল খাবার সেবন করুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবারে জাতীয় খাবার খাওয়া।
- প্রস্রাব আটকিয়ে না রাখা।
- শারীরিক মিলন করার পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা এবং প্রস্রাব করা।
- যৌনাঙ্গে কোন কেমিক্যাল এবং রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার না করা।
- টয়লেট করার পরে সামনে থেকে মল ধুয়ে ফেলা এবং পিছন দিক থেকে না ধোয়া।
উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চললে কিডনি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডাক্তার দেখানোর সঠিক সময়
কিডনি সংক্রমণ বোঝার আগে ডাক্তার দেখানো সঠিক সময় নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
- পিঠের চারপাশে ব্যথা হলে
- জ্বর এবং ঠান্ডা লাগলে
- অস্বস্তি বমির ভাব অনুভব হলে
- অতিরিক্ত পেট খারাপ হলে
উল্লেখিত কারণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা।
কিডনি ভালো রাখার খাবারের তালিকা
কিডনি ভালো রাখার খাবারের তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
- আপেল জাতীয় ফল
- পাতাকপি জাতীয় সবজি
- লাল শাক জাতীয় সবজি
- ব্লুবেরি জাতীয় ফল
- মিষ্টি আলু জাতীয় সবজি
- আনারস জাতীয় ফল
- পুষ্টিক জাতীয় মাছ
- রসুন
- বাঁধাকপি জাতীয় সবজি
- ফুলকপি জাতীয় সবজি
- পেঁয়াজ
- ডিম জাতীয় খাবার
- দুগ্ধ জাতীয় খাবার
- লাল মরিচ
- বাদামি চাল জাতীয় খাবার
- ডিমের মধ্যে সাদা অংশ
- চামরাহীন মুরগির মাংস ইত্যাদি
উল্লেখিত খাবার গুলো নিয়মিত খেলে কিডনি সুস্থ থাকে।
সাধারণ জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
কিডনির ব্যথা কোথায় হয়?
উত্তরঃ কিডনির চারপাশে, পিঠের চারপাশে, মেরুদন্ডের চারপাশে।
কত পয়েন্ট থাকলে কিডনি ভালো থাকে?
উত্তরঃ মেয়েদের রক্তে ০.৫-১.১ মিলিগ্রাম এবং ছেলেদের প্রতি লিটার রক্তে
০.৬-১.২ মিলিগ্রাম। তবে ১.৮ মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকে।
দুটি কিডনি কাজ করছে কিনা কিভাবে বুঝবো?
উত্তরঃ GFR পরীক্ষা করার মাধ্যমে।
কিডনির ব্যথা কেমন হয়?
উত্তরঃ মৃত্যু যন্ত্রণার মত।
কিডনি নষ্ট হলে কত দিন বাঁচে?
উত্তরঃ কয়েক সপ্তাহ।
কিডনির জন্য কোন ফল ভালো?
উত্তরঃ বরই, আপেল, আঙ্গুর ইত্যাদি।
শেষ মন্তব্য-কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে
সম্মানিত পাঠক গন উপযুক্ত আলোচনা শেষে আপনার ইতিমধ্যে কিডনি রোগের লক্ষণ, কিডনি
রোগের প্রতিকার, কিডনি রোগের চিকিৎসা, কিডনি সংক্রমণের উপায় এবং কিডনি ভালো
রাখার খাবারের তালিকা ইত্যাদি বিষয় জানলেন। একজন পুরুষ এবং নারী উভয়ই কিডনি
সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া যারা এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যায় ভুগছেন
তারা অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে অনেক উপকৃত হবেন। আর আমাদের আর্টিকেলটি
যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট
করবেন।
স্টার বিডি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url