বাংলাদেশের ১০ টি কুটির শিল্পের নাম ও কুটির শিল্প কি।
বাংলাদেশের ১০ টি কুটির শিল্পের নাম এবং কুটির শিল্প কি ইত্যাদি বিষয় জানতে চান।
তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। কারণ আজকে আমরা কুটির শিল্প নিয়ে বিভিন্ন
ধরনের তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। এজন্য অবশ্যই আপনাকে আমাদের আর্টিকেলের
শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে।
সম্মানিত পাঠকগন আজকে আমরা কুটির শিল্পের বৈশিষ্ট্য, কুটির শিল্পের ইতিহাস
সম্পর্কে আলোচনা করব। বর্তমান বেশিরভাগ মানুষ কুটির শিল্প বিষয় নিয়ে গুগলে
সার্চ দিয়ে থাকে। তাই আপনারা আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে কুটির শিল্প সম্পর্কে
জানতে পারবেন।
উপস্থাপনা
আপনি কি বেকার হয়ে কাজ খুঁজছেন অথবা আপনি কি নিজস্বভাবে কোন ব্যবসা করতে
যাচ্ছেন। তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতেই চলে এসেছেন কারণ আজকে আমরা কুটির শিল্প নিয়ে
আলোচনা করব। যা পরবর্তীতে আপনারা ব্যবসায়ী আইডিয়া হিসেবে কাজ করতে পারবেন। কারণ
আপনি যদি কুটির শিল্প সম্পর্কে কিছু ধারনা নিতে পারেন তাহলে অল্প যন্ত্রপাতি
নিয়ে পারিবারিকভাবে কুটির শিল্পের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এই সকল ব্যবসা শুরু
করতে হলে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। তো চলুন বাংলাদেশের কি কি কুটির
শিল্প নিয়ে ব্যবসা শুরু করা যায় সে সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সামনে শেয়ার
করব।
কুটির শিল্প কি
কুটির শিল্প কি এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বর্তমানে বিভিন্ন স্কুল
প্রাতিষ্ঠানে বই-পুস্তকে কুটির শিল্প নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। তাই এ
সম্পর্কে অনেকের ধারণা রয়েছে কিন্তু যাদের ধারণা নেই তারা অবশ্যই আমাদের
আর্টিকেলটি পড়বেন। কারণ আজকে আমরা সহজ ভাবে কুটির শিল্প বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
কুটির শিল্প বলতে এক কথায় পারিবারিকভাবে অথবা কিছু সংখ্যক শ্রমিক নিয়ে বাড়িতে
শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করাকে কুটির শিল্প বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে হাতের
সাহায্যে যে সকল দ্রব্য এবং পণ্য উৎপাদন করা হয় তাকে কুটির শিল্প বলে।
কুটির শিল্পের বৈশিষ্ট্য
কুটির শিল্পের বৈশিষ্ট্য হল পারিবারিক সদস্যের সমন্বিত বৈশিষ্ট্য। কুটির শিল্পের
বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
আরো পড়ুনঃ সোনালী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম।
- কুটির শিল্প সাধারণত পারিবারিক একটি প্রতিষ্ঠান যা সদস্যদের নিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে।
- কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে বেশি টাকা প্রয়োজন হয় না।
- কুটির শিল্প বাড়িতে যেকোন জায়গায় তৈরি করা যায়।
- কুটির শিল্প তৈরি করতে হলে কাঁচামালের ব্যবহার প্রয়োজন হয়। যা প্রাকৃতিক সম্পদকে নিশ্চিত করে।
কুটির শিল্পের ইতিহাস
কুটির শিল্পের ইতিহাস সম্পর্কে ১৯৯৫ সালের রচিত একটি গল্পে প্রকাশিত করেছে
বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত লেখক শহিদুল জহির। যা পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ডুমুর খেকো
নামক একটি গল্পে দ্বিতীয়বারের মতো সংকলন হয়েছে। শুধু তাই নয় পরবর্তীতে ২০০৪
সালে অন্যান্য গল্পে কুটির শিল্পের ইতিহাস নিয়ে সংকলন করা হয়েছে।
ক্ষুদ্র এবং কুটির পার্থক্য
ক্ষুদ্র এবং কুটির শিল্পের পার্থক্য নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
ক্ষুদ্র শিল্প সম্পর্কেঃ-
- যে সকল প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে জমি কারখানার জন্য খরচ হয় না কিন্তু অন্যান্য সম্পদ স্থাপনের জন্য এক কোটি টাকার উপরে এবং দেড় কোটি টাকার নিচে খরচ হয় তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে।
- ক্ষুদ্র শিল্প তৈরি করতে অল্প সংখ্যক শ্রমিক এবং এক মালিকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়।
- ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগ হয় প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি টাকার মত।
- ক্ষুদ্র শিল্প পারিবারিকভাবে তৈরি হয় না।
- ক্ষুদ্র শিল্প অনেকগুলো সেক্টরের মাধ্যমে দ্রব্য উৎপাদন হয়।
কুটির শিল্প সম্পর্কেঃ-
- কুটির শিল্প পারিবারিক সদস্যের মাধ্যমে তৈরি হয়।
- কুটির শিল্প বিনিয়োগের হার প্রাথমিকভাবে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা।
- কুটির শিল্পকে বলা হয় পারিবারিক শিল্প।
- কুটির শিল্প কাঁচামালের সাহায্যে পণ্য তৈরি হয়।
বাংলাদেশের ১০ টি কুটির শিল্পের নাম
বাংলাদেশের ১০ টি কুটির শিল্পের নাম নিচে উল্লেখ করা হলঃ-
- তাঁত শিল্পঃ- বাংলাদেশের তাঁত শিল্প সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্য শিল্প হিসেবে বেশি পরিচিত। তাঁত শিল্পে যেসব পণ্য তৈরি করা হয় যথাঃ-
- বস্ত্র
- গামছা
- তুশ
- কাপড় চোপর ইত্যাদি
বাংলাদেশের ১০ টি কুটির শিল্পের মধ্যে তাঁত শিল্প অন্যতম।
- বাঁশ এবং বেত শিল্পঃ- বাঁশ এবং বেত মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা হয় এই শিল্পে যে সকল দ্রব্য তৈরি হয় যথাঃ-
- বাড়ির বেড়া
- বাড়ির চাটাই
- হাতের পাখা
- মাছ মারার যন্ত্র
- বসার মোরা
- টেবিলের ফুলদানি ইত্যাদি
পারিবারিক শিল্প হিসেবে এই পণ্যগুলো তৈরি করা হয়।
- সেলাই শিল্পঃ- বাংলাদেশের ১০ টি শিল্পের মধ্যে সেলাই শিল্প অনেক জনপ্রিয়। কারণ মানুষের প্রধান চাহিদার বিষয় হল সেলাই শিল্প যা দৈনন্দিন ব্যবহার হয়ে থাকে যথাঃ-
- থ্রি পিস
- পেটিকোট
- ছায়া
- জামা
- প্যান্ট
- পাঞ্জাবি ইত্যাদি
এ সকল পণ্যগুলো সেলাই শিল্পের মাধ্যমে তৈরি করা হয়।
- বস্ত্র শিল্পঃ- বস্ত্র শিল্প বাংলাদেশের ১০ টি শিল্পের মধ্যে আরো একটি অন্যতম শিল্প। এই শিল্পের মধ্যে যে সকল পণ্য তৈরি করা হয় যথাঃ-
- শাড়ি
- লুঙ্গি
- তোয়াল
- ধুতি
- গামছা
- মশারি ইত্যাদি
এ পণ্যগুলো বস্ত্র শিল্পের মধ্যে অন্যতম শিল্প।
- নকশি কাঁথা শিল্পঃ- নকশী কাঁথার শিল্প প্রাচীন আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত খুবই জনপ্রিয় এবং চাহিদা সম্পূর্ণ শিল্প। নকশি কাঁথা অল্প টাকা খরচ করে বেশি টাকা বিক্রি করা যায়। যা গ্রামীন মহিলারা এ পেশার সাথে বেশি সম্পৃক্ত। এ বিষয়গুলো তুলে ধরে থাকে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। বর্তমান বাংলাদেশে তিন ধরনের নকশি কাঁথা তৈরি করা হয় যথাঃ-
- বিচিত্র কাথা
- মাটির কাঁথা
- পাইর কাঁথা ইত্যাদি
বর্তমান এ ৩ ধরনের নকশি কাঁথা তৈরি বাংলাদেশে। অন্য পোস্ট পড়তে ক্লিক করুন
- শীতল পাটি শিল্পঃ- শীতল পাটি শিল্প গ্রামীণ শৌখিন মানুষের শিল্প বলা হয়। এই শিল্পকে গ্রামীণ মানুষ সাংস্কৃতিক, রূপরেখায় এবং প্রাকৃতিক রূপ হিসেবে সযত্নে এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। শীতলপাটি বর্তমান বিভিন্ন জেলায় তৈরি করা হয়। যা অনেক লাভজনক ব্যবসা হিসেবে পরিচিত।
- পিতল এবং কাঁসা শিল্পঃ- বাংলাদেশের ১০ টি শিল্পের মধ্যে পিতল এবং কাঁসা শিল্প খুবই জনপ্রিয়। এর কারণ হল বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় পিতল এবং কাঁসা তৈরি করা হয় যা সারা বাংলাদেশে লাভজনকভাবে সরবরাহ করা হয়। যে সকল জেলায় বেশি এ পণ্যগুলো তৈরি হয় নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ-
- ঢাকা
- সাভার
- ধামরাইল
- জামালপুর
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ
- টাঙ্গাইল
- শরীয়তপুর
- রংপুর ইত্যাদি
এ সকল জেলাতে সবচেয়ে বেশি পিতল এবং কাঁসা তৈরি করা হয়।
- পাট শিল্পঃ- পাট শিল্প অনেক পুরাতন শিল্প যা বাংলাদেশের সোনালী আঁশ বলা হয়। এর কারণ হল পাট শিল্পের পণ্য অনেক সুন্দর হয়ে থাকে যেমনঃ-
- শতরঞ্জি
- ম্যাট
- টেবিল
- ব্যাগ
- হ্যান্ড
- কার্পেট
- শিকা
- ব্যাগ
- বস্তা ইত্যাদি
এ সকল পণ্যগুলো পাট শিল্পের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয়।
- মৃৎ শিল্পঃ- বাংলাদেশের ১০ টি শিল্পের মধ্যে মৃৎ শিল্প অনেক পরিচিত শিল্প। মৃৎ শিল্প তৈরি হয় মূলত মাটির মাধ্যমে। এই শিল্পের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় পূর্ণগুলো তৈরি করা হয় যেমনঃ-
- ফুলের টপ
- কলস
- পাতিল
- হাড়ি
- পুতুল
এ সকল পণ্যগুলো মাটির মাধ্যমে তৈরি করা হয়। কোন কোন জেলায় মাটির তৈরি শিল্প
তৈরি করা হয় নিচে তা উল্লেখ করা হলঃ-
- কুমিল্লা জেলা
- ফেনী জেলা
- সিরাজগঞ্জ জেলা
- টাঙ্গাইল জেলা ইত্যাদি
এই জেলায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র বেশি তৈরি করা হয়।
- গহনা শিল্পঃ- গহনা শিল্প বাংলাদেশের ঐতিহ্য এক শিল্প কারণ গহনা পৃথিবীর সব নারী পড়তে বেশি পছন্দ করে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের নারীরা এদিকে অনেক এগিয়ে। তাই বিভিন্ন জেলাতে পারিবারিকভাবে গহনা শিল্প প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যারা গগনা শিল্প করেছে তারা বাজারে পণ্য বাজারজাত করে অধিক পরিমাণ মুনাফা অর্জন করে থাকে। তাই এই শিল্পের চাহিদা অনেক বেশি।
সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন
কুটির শিল্প বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ পারিবারিক শিল্প কে কুটির শিল্প বলা হয়।
বাংলাদেশে কত ধরনের শিল্প আছে?
উত্তরঃ চার ধরনের শিল্প যথা: ক্ষুদ্র শিল্প / কুটির শিল্প / মাঝারি শিল্প / এবং
বৃহৎ শিল্প।
বাংলাদেশের দুটি কুটির শিল্পের নাম কি?
উত্তরঃ তাঁত শিল্প / বস্ত্র শিল্প।
শেষ মন্তব্য-বাংলাদেশের ১০ টি কুটির শিল্পের নাম সম্পর্কে
সম্মানিত পাঠক গন উপরের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে আপনারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ১০
টি কুটির শিল্পের নাম, কুটির শিল্প কি, কুটির শিল্পের ইতিহাস, কুটির শিল্পের
বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে পার্থক্য ইত্যাদি বিষয় জানতে
পেরেছেন। কুটির শিল্প বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য এক শিল্প যা মানুষের দৈনন্দিন
জীবনে এই শিল্পের পণ্যগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে।
যারা কুটির শিল্প নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন তারা চাইলে আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে
কুটির শিল্প সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। এজন্য আমরা আশাবাদী যে, আমাদের এ
আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের চাহিদা
অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল তৈরি করে রাখি। তাই আপনারা চাইলে
আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।
স্টার বিডি নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url