গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা এবং কিছু নিষিদ্ধ খাবার সম্পর্কে জানুন।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা এবং গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির দিকে নজর ইত্যাদি বিষয়
গুলো জানা খুবই জরুরী। যে সকল গর্ভবতী মায়েরা ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে কোন ধরনের
খাবার খেতে হয় সে সম্পর্কে যাদের আইডিয়া নেই। তাদের চিন্তা করার কারণ নেই আজকে
আমাদের পোস্টটা শুধুমাত্র তাদের জন্যই। এ জন্য প্রত্যেকটা গর্ভবতী মায়ের খাবারের
তালিকা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রিয় পাঠক গন গর্ভবতী হওয়া প্রত্যেকটা নারীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং সুখের।
কিন্তু নবাগত সন্তানকে সুস্থ ও ভালো রাখতে হলে অবশ্যই খাবারের প্রতি গুরুত্ব দিতে
হবে। গর্ভবতী হওয়ার পরে কোন ধরনের খাবার খেতে হয় আজকে আমরা সেই সম্পর্কে আলোচনা
করব।
ভূমিকা
গর্ভবতী হওয়ার পরে খাবারের তালিকা ঠিক রাখা প্রত্যেকটা মায়ের গুরুত্বপূর্ণ
দায়িত্ব। এর কারণ হলো পেটের নবাগত সন্তানের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে
গর্ভবতী মাকেই দায়িত্ব নিতে হয়। এজন্য যে সকল খাবারগুলোতে পুষ্টিকর উপাদান
রয়েছে সেই সকল খাবারগুলো বাছাই করে নিতে হবে। তবে কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা
গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সেই সকল খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তাই
আপনারা যদি গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই আমাদের
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। কারণ আজকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ খাবার সম্পর্কে
আলোচনা করব।
গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির দিকে নজর
গর্ভবতী হওয়ার পরে একটা সময় গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির দিকে নজর রাখা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। একটা সময় আস্তে আস্তে নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে
এবং কোন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যাবে অথবা কোন ধরনের খাবার খেলে ক্ষতিকর এ
বিষয়গুলো নিজেরই খেয়াল রাখতে হবে। একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন তার খাবারের
প্রতি নজর দিতে হয় এবং নিয়মিত খাবার খেতে হয়। এর কারণ হলো গর্ভবতী হওয়ার ফলে
একটা শরীরের মধ্যে আরেকটা নবজাতক সন্তান বেড়ে ওঠে।
যার ফলে নবজাতক সন্তানের জন্য হলেও গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা করা ও পুষ্টকর
খাবার খাওয়া জরুরী। কিন্তু আপনি গর্ভবতী হওয়ার পরে যদি ৩ মাস আপনার ওজন কমে
যায় তাহলে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এই তিন মাস অনেক সময় বমি বমি ভাব দেখা দিবে,
খাবারের প্রতি অনীহা চলে আসবে যার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এবং
প্রথম ৩ মাসে শারীরিক ওজন কিছুটা হলেও কমে যেতে পারে। তবে পরবর্তী সময় যদি আপনি
পুষ্টিকর খাবারের প্রতি নজর দিয়ে নিয়মিত খাবার খেতে পারেন।
তাহলে আস্তে আস্তে শারীরিক ওজন স্বাভাবিক হতে শুরু করবে। এজন্য প্রত্যেকটা
গর্ভবতী মায়ের উচিত প্রেগন্যান্ট এর সময় খাবার খাওয়া যাতে করে নবজাতক শিশুর
বেড়ে উঠতে সুবিধা হয়।
১ থেকে ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী হওয়ার পরে ৩ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ
নয়। তবে এই সময়টাতে পরিমাণ মতো ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই সময়টাতে শারীরিক ওজন ওঠা নামা করে খাবার উপর নির্ভর করে। তবে এই সময়টাতে
যদি ওজন বেড়ে যায় তাহলে স্বাভাবিকভাবে ব্যায়াম করার মাধ্যমে ওজন কমিয়ে আনতে
হবে। আবার যদি ওজন কমে যায় স্বাভাবিক খাবার একটু বাড়িয়ে দিতে হবে তাহলে ওজন
স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে গর্ভবতী মায়ের যদি উচ্চতা ৫ ফুট ২-৩ ইঞ্চি হয়। এবং
গর্ভবতী হওয়ার আগে যদি ৫০ থেকে ৫৫ কেজি ওজন হয় এবং সপ্তাহে যদি ৩ থেকে ৪ দিন
স্বাভাবিক ব্যায়াম করে। সেই গর্ভবতীর মায়ের খাবারের তালিকা নিচে প্রকাশ করা হলো
:
খাবারের তালিকা | খাবারের পরিমাণ |
---|---|
চাউলের ভাত | ৫৫০-৬০০ গ্রাম |
মাংস ও মাছ | ৫০-৬০ গ্রাম |
দুধ | ২৫০-৩০০ গ্রাম |
ডিম | ১টা |
রঙিন ও লাল শাক | ২৫০-৩০০ গ্রাম |
ঘন ডাউল | ৪০০-৫০০ গ্রাম |
উপরের উল্লেখিত খাবারের তালিকা গুলো গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি চাইলে গর্ভবতী অবস্থায় এ ধরনের খাবার গুলো খেতে পারেন।
৪ থেকে ৯ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
৪ থেকে ৯ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই
সময়টাতে গর্ভবতী মায়ের পেটে নবজাতক শিশু আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে। এ সময়ে পরিমাণ
মতো পুষ্টিকর খাবার ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খাওয়া জরুরি। নিচে ক্যালসিয়াম
জাতীয় খাবারের পরিমাণ তালিকা করা হল:
৪ থেকে ৯ মাস | ক্যালসিয়ামের পরিমাণ |
---|---|
৪ থেকে ৬ মাস | খাবার ৩৫০ গ্রাম ক্যালরি |
প্রতিদিন তিন বেলা | ৫-৭টি বাদাম |
৭ থেকে ৯ মাস | খাবার ৪৫০ গ্রাম ক্যালরি |
২টি বাচ্ছার ক্ষেত্রে | প্রতিদিন খাবার ৫০০-৬০০ গ্রাম ক্যালরি |
উপরের উল্লেখিত ক্যালরি খাবারগুলো বিভিন্ন মাসে ওজনের কারণে পরিবর্তন হতে
পারে। তবে ওজন স্বাভাবিক থাকলে উপরের তালিকা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম খাবার গুলো
খেতে পারেন।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
মানব জীবনে চলতে গেলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নিয়মের ভিতর চলতে হয়। ঠিক
তেমনি একজন নারী গর্ভবতী হওয়ার পরে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়মের মধ্যেই
পড়ে। কারণ নিয়ম মাফিক কোন কাজ না করলে সেটার ফলাফল ভালো হয় না। এজন্য গর্ভবতী
মা যদি খাবারে তালিকা না করে সব ধরনের খাবার খায় তাহলে নবজাতক শিশুর জন্য অনেকটা
ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তাই আজকে আমরা গর্ভবতী মায়ের খাবারের তালিকা উল্লেখ করব। আপনারা চাইলে সেই
খাবারগুলো ফলো করে নবজাতক শিশুর জন্য সুস্থ স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে পারেন।
নিচে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
গর্ভবতী মায়ের শর্করা জাতীয় খাবার
মানবদেহের শক্তির প্রধান উৎস বেশিরভাগ আসে শর্করা জাতীয় খাবার থেকে। শুধু তাই
নয় শর্করা জাতীয় খাবারে প্রচুর ভিটামিন পাওয়া যায়। তাই গর্ভবতী মায়ের
ক্যালসিয়াম পূরণ করার জন্য গর্ভবতী মায়ের শর্করা জাতীয় খাবার গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। এজন্য নিচে কিছু শর্করা জাতীয় খাবারের তালিকা দেয়া হলো :
- ভাত হলো শর্করা জাতীয় খাবার
- রুটি শর্করা জাতীয় খাবার
- ভুট্টা শর্করা জাতীয় খাবার
- নুডুলস শর্করা জাতীয় খাবার
- আলু শর্করা জাতীয় খাবার
- পাস্তা শর্করা জাতীয় খাবার
এই সকল খাবারগুলো গর্ভবতী মায়ের শরীরের ক্যালসিয়াম পূরণ করতে সাহায্য করে। আপনি
চাইলে এই শর্করা জাতীয় খাবার গুলো খেতে পারেন।
গর্ভবতী মায়ের শাকসবজি জাতীয় খাবার
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা হল শাকসবজি জাতীয় খাবার। এবং গর্ভবতী মায়ের
শাক-সবজি জাতীয় খাবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ হলো বিভিন্ন ধরনের শাক
সবজির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ রয়েছে। বিশেষ করে রঙিন শাকসবজি
গুলো খাওয়ার ফলে গর্ভের নবজাতক শিশুর বেড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এজন্য টাটকা শাকসবজি খেতে পারেন যাতে করে কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় সমস্যা থেকে রেহাই
পাওয়া যায়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাক সবজির তালিকা দেওয়া হল :
- মিষ্টি কুমড়া
- মিষ্টি আলু
- পালং শাক সবজি
- টমেটো
- মটর শুটি সবজি
- গাজর ইত্যাদি।
এ সকল সবজিগুলো খাবার ফলে গর্ভবতী মায়ের ভিটামিন ও খনিজ লবণ জাতীয় চাহিদা পূরণ
করে থাকে। আপনি চাইলে এ সকল শাকসবজি খেতে পারেন।
গর্ভবতী মায়ের প্রোটিন জাতীয় খাবার
গর্ভবতী মায়ের নবজাতক শিশুর শারীরিক গঠন বৃদ্ধি করার জন্য গর্ভবতী মায়ের
প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আমরা এমন কিছু প্রোটিন
জাতীয় খাবার সম্পর্কে আলোচনা করব। নিচে এই সকল প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলোর
তালিকা দেওয়া হল:
- ডিম জাতীয় খাবার
- দুধ জাতীয় খাবার
- মাংস জাতীয় খাবার
- মাছ জাতীয় খাবার
- বাদাম জাতীয় খাবার
- ডাল জাতীয় খাবার ইত্যাদি
এ সকল খাবার গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে। এই সকল খাবার গুলো
খাওয়ার ফলে নবজাতক শিশুর শারীরিক গঠন অনেক সুন্দর হয়।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তৈলাত্বক জাতীয় মাছ
গর্ভবতী অবস্থায় তৈলাত্বক জাতীয় মাছ খাওয়া খুবই জরুরী। গর্ভবতী হওয়ার পরে
প্রথম সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম মাছ খেলে ভালো হয় এবং এ সকল মাছের মধ্যে রয়েছে ছোট
জাতীয় মাছ। তবে সব মাছের সাথে কিছু তৈলাত্বক মাছ জাতীয় খাওয়া খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। যে সকল গর্ভবতী সময়ের আগে নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করার সম্ভাবনা
থাকে। এই সম্ভাবনা প্রতিরোধ করতে তৈলাত্বক জাতীয় মাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে থাকে। নিচে কিছু তৈলাত্বক জাতীয় মাছের তালিকা দেয়া হলো :
- পুঁটি জাতীয় মাছ
- ইলিশ জাতীয় মাছ
- বাটা জাতীয় মাছ
- বাঁশ পাতা জাতীয় মাছ
- শোল জাতীয় মাছ
- চাপলা জাতীয় মাছ ইত্যাদি।
এ সকল মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ তৈলাত্বক উপাদান রয়েছে। এ সকল মাছ প্রতিদিন
খেলে সময়ের আগে নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ প্রতিরোধ করে। এখানে ক্লিক করুন
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
ইতিপূর্বেই আপনারা গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা জেনে গেছেন। এখন আমরা গর্ভবতী
মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে আলোচনা করব। নিচে সেই সকল খাবারের তালিকা
দেয়া হলো :
- কোমল জাতীয় পানি-কোকাকোলা
- আইসক্রিম জাতীয় খাবার
- কেক জাতীয় খাবার
- চিপস জাতীয় খাবার
- ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার
- মাখন জাতীয় খাবার
- ঘি জাতীয় খাবার
- ডালডা জাতীয় খাবার
- ক্রিম জাতীয় খাবার ইত্যাদি।
এই সকল খাবারগুলো গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার। এ সকল খাবার খেলে নবজাতক শিশুর
ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই। আপনারা চাইলে এ সকল খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে
পারেন।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক গন উপযুক্ত আলোচনা থেকে ইতিমধ্যে আপনারা গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
এবং গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে ইতিপূর্বে জেনে গেছেন। আপনারা
চাইলে উপরের খাবার গুলো মেনে তারপর খেতে পারেন। কারণ হলো গর্ভবতী মায়ের জন্য
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই খাবারগুলো সম্পর্কে আমরা আলোচনা
করেছি। আশা করি আজকের পোস্টটা আপনাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হতে পেরেছে। আমরা বরাবরই
চেষ্টা করি আপনাদের কাছে নতুন নতুন তথ্য পৌঁছে দিতে। যেহেতু আপনারা এত কষ্ট করে
আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন সেজন্য আপনাদের সবাইকে
অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url