আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা-আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা এবং আমাশয় রোগ কি ইত্যাদি বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে এখনো অজানা। তবে যাদের আমাশয় রোগ রয়েছে কিন্তু এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় এ বিষয়গুলো বুঝতে পারছেন না তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা
প্রিয় পাঠক গন আমাশয় রোগ সম্পর্কে কম বেশি সবারই পরিচিত। কিন্তু আমাশয় রোগের লক্ষণ কি এবং কিভাবে প্রতিকার করা যায় এ বিষয়গুলো জানতে হলে অবশ্যই আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। আজকে আমরা আমাশয় রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ভূমিকা

বর্তমানে অধিকাংশ মানুষই আমাশয় রোগ সম্পর্কে পরিচিত এটি মানব শরীরের খুবই মারাত্মক সমস্যা। আমাশয় হল এক ধরনের অস্ত্রের প্রদাহ যার ফলে পেটে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং রক্তাক্ত মাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে এই সমস্যা বেশিরভাগ ৪ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী ভাবে থাকে। যার কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করতে হয়। যারা আমাশয় রোগে ভুগছেন তারা আমাশয় রোগ কিভাবে প্রতিকার করা যায় এ বিষয়গুলো জানার জন্য আমাদের আর্টিকেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন। আজকে আমরা আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

আমাশয় রোগ কি

আমাশয় রোগ কি এই বিষয়টা অধিকাংশ মানুষই জানেন আবার কিছু সংখ্যক মানুষ আছে যারা বিষয়টা জানেন না। তো চলুন বিষয়টা যেনে নেওয়া যাক আমাশয় রোগ হল অস্ত্রের সংক্রমণ রোগ যা মলে রক্তাক্ত সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে পেটে ডায়রিয়া সংক্রমণ সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয় এই ডায়রিয়া হওয়ার ফলে প্রতিদিন ৩ থেকে ৮ বার মলত্যাগ করা সম্ভাবনা থাকে। এবং অতিরিক্ত ডায়রিয়া হলে ৮০ থেকে ১০০ বারের বেশি মলত্যাগ করা সম্ভাবনা থাকে। 

অতিরিক্ত ডায়রিয়া হওয়ার ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েদের ১০০ ডিগ্রি বা তারচেয়ে বেশি জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়ার কারণে সাধারণত আমাশয় রোগ হয়ে থাকে এটি খুব মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। এটি বিভিন্ন ধরনের খাবার, থালা-বাসন এবং একই বাথরুম ব্যবহার করলে হাতের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা হলে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে রাখা সর্বোত্তম। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।

পুরাতন আমাশয় এর লক্ষণ

পুরাতন আমাশয় এর লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন : যেকোনো সময় ঘন ঘন পাতলা মলত্যাগ শুরু হতে পারে এটাকে এক ধরনের ডাইরিয়া বলা হয়। কিন্তু এই আমাশয় রোগের চিকিৎসা নিতে যদি দেরি হয় তাহলে দিনে ৭ থেকে ১০ বার মলত্যাগ শুরু হতে পারে। শুধু তাই নয় এই রোগীর শারীরিক তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে এবং প্রচন্ড জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারলে পুরাতন আমাশয় রোগ ভালো করা সম্ভব।

দীর্ঘস্থায়ী আমাশয়

বিভিন্ন ধরনের আমাশয় রোগ হতে পারে যেমন : কিছু আমাশয় রয়েছে যেগুলো অল্প চিকিৎসার ফলে ভালো হয়। আবার কিছু আমাশয় রয়েছে যেগুলো দীর্ঘস্থায়ী আমাশয় বলা হয় এগুলো ভালোভাবে চিকিৎসা না করলে ভালো হয় না। তবে দীর্ঘ স্থায়ী আমাশয় রোগীর মলত্যাগের জায়গায় সরু অথবা ফাঁক হয়ে যায় এবং মলত্যাগের ভেতর থেকে অতিরিক্ত মাংস বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমাশয় রোগের কারণ কি

আমাশয় রোগের কারণ কি এর সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায় নি। তবে বিভিন্ন কারণে আমাশয় রোগ হতে পারে নিচে সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হল যথা :

  • ব্যাকটেরিয়ার কারণে আমাশয় রোগ হতে পারে।
  • অপরিষ্কার পানি পান করার ফলে আমাশয় রোগ হতে পারে।
  • অপরিষ্কার পানিতে গোসল করার ফলে আমাশয় রোগ হতে পারে।
  • বাথরুম করার পরে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার না করলে আমাশয় রোগ হতে পারে ইত্যাদি।
এ সকল কারণে আমাশয় রোগ হতে পারে তবে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করলে ভালো হওয়া সম্ভব।

আমাশয় রোগের লক্ষণ কি কি

আমাশয় রোগের লক্ষণ কি কি এ বিষয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। তবে আজকের আর্টিকেল পড়ার পরে আপনারা সবাই এ বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকবেন। তো চলুন সময় নষ্ট না করে আমাশয় রোগের লক্ষণ যেনে নেওয়া যাক যথাঃ এখানে ক্লিক করুন

  • তলপেট ব্যথা হয়
  • ডায়রিয়া হতে পারে
  • খাবারের প্রতি অনীহা
  • বমি হওয়ার সম্ভাবনা
  • শারীরিক দুর্বলতা
  • পেট ফুলে যাওয়া
  • শারীরিক ওজন কমা
  • তীব্র মাথার যন্ত্রণা
  • ১০০ ডিগ্রীর উপরে তাপমাত্রা
  • অতিরিক্ত পেটে গ্যাস তৈরি
  • রক্তাক্ত মলত্যাগ করা
  • ঘন ঘন মলত্যাগ করা
  • দুর্গন্ধযুক্ত মলত্যাগ করা ইত্যাদি
এই সকল লক্ষণ গুলো আমাশয় হওয়ার জন্য যথেষ্ট তবে একটা বিষয় আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আমাশয় রোগের প্রতিকার

আমাশয় এক ধরনের অস্ত্রের সংক্রমণ ব্যাধি যা পেটে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং অতিরিক্ত পেট ফুলে যায়। 
আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা উপায় জানতে ক্লিক করুন
শুধু তাই নয় এটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে হতে পারে। এজন্য আমাশয় রোগের প্রতিকার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল যথাঃ

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
  • আদা খাওয়ার অভ্যাস করা
  • হলুদ খাওয়ার অভ্যাস করা
  • রসুন খারাপ অভ্যাস করা
  • পরিমাণ মতো বিশ্রাম নেওয়া
  • স্বাস্থ্য সেবা নেওয়া
  • চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
  • ক্যামো-মাইল চা খাওয়া ইত্যাদি
এ সকল উপাদান গুলো খাওয়ার ফলে আমাশয় রোগের প্রতিকার করা সম্ভব। তবে এই খাবার গুলো ধারাবাহিক ভাবে খেতে হবে।

আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণে আমাশয় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং বিভিন্ন সময় অপরিষ্কার থাকার কারণে এ রোগটি হতে পারে। তবে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার কারণে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। এজন্য নিচে ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা হলঃ

  • ডাবের পানিঃ আমাশয় রোগের ফলে ঘন ঘন মলত্যাগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডাবের পানি পান করার ফলে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়।
  • অর্জুন গাছের ছালঃ অর্জুন গাছের ছাল অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে অর্জুন গাছের ছাল পানিতে ভিজিয়ে পান করতে পারেন।
  • আখের গুড়ঃ আখের গুড় অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে সকালে খালি পেটে আখের গুড়ে শরবত খেতে পারেন।
  • আদা চা সেবনঃ আদার উপকারিতা কমবেশি সবাই জানেন। আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে আদা কুচি কুচি করে কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে চা সেবন করুন।
  • লেবুর রস এবং ধনেপাতাঃ আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে দুই চামচ লেবুর রস, এক চামচ ধনে পাতার রস একসাথে মিশিয়ে এক গ্লাস পানি পান করুন।
  • লেবুর রস এবং পুদিনা পাতাঃ আমাশয় অথবা ডাইরিয়া হলে দু চামচ রস এবং ১০ থেকে ১৫ টি পুদিনা পাতার রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
  • মধু, দুধ এবং লেবুঃ আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে মধু, দুধ, এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে পান করুন।
  • লবণ এবং লেবুর রসঃ আমাশয় অথবা ডাইরিয়া হলে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে লবণ এবং লেবুর রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
  • ডালিম রসঃ আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ডালিমের রস খেতে পারেন।
  • কমলার রসঃ আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে দিনে এক গ্লাস কমলার রস পান করুন ইত্যাদি।
আমাশয় অথবা ডায়রিয়া হলে এ সকল খাবারগুলো ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে খেতে পারেন। তবে এ সকল খাবার খেলে দ্রুত শারীরিক সুস্থতা ফিরে আসবে।

আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা

আমাশয় রোগ যেহেতু এক ধরনের অস্ত্রের সংক্রমণ ব্যাধি তাই এই রোগীর উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার খাওয়া। নিচে আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা দেয়া হলঃ

  • আপেল জাতীয় ফল
  • কলা জাতীয় ফল
  • আলু জাতীয় খাবার
  • ভাত জাতীয় খাবার
  • সবজি জাতীয় খাবার
  • দই জাতীয় খাবার
  • কমলা জাতীয় ফল
  • ডালিম জাতীয় ফল
  • সুপ জাতীয় খাবার
  • সবুজ জাতীয় চা ইত্যাদি
আমাশয় রোগীর জন্য এই সকল খাবার গুলো সর্বোত্তম এবং এ সকল খাবার খাওয়ার ফলে আমাশয় রোগী দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে যে সকল খাবার গুলো ক্ষতিকর সে সকল খাবার গুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।

আমাশয় রোগের এন্টিবায়োটিক

আমাশয় রোগের এন্টিবায়োটিক অত্যন্ত কার্যকরী তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঔষধ খেতে পারেন যেমন : টিনিডাজোল, নরফ্লক্সটিজেড, নরফ্লক্সাসিন ইত্যাদি। এই সকল ঔষধ গুলো আমাশয় অথবা ডায়রিয়ার জন্য খুবই ভালো কাজ করে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে এ সকল ঔষধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধের নাম বাংলাদেশ

আমাশয় রোগ একটি সংক্রমণ ব্যাধি এবং রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধের নাম বাংলাদেশ। তবে আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা যদি ভালো না হয়। 
রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধের নাম বাংলাদেশ
তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ পাওয়া যায় যেগুলো সেবন করতে পারেন। আমাশয় রোগের কিছু ঔষধের নাম নিচে তালিকাভুক্ত করা হলোঃ


  • Ciprofloxacin
  • Relexid
  • Pinam
  • Safetriaxon
  • Zox
  • Emcil
  • Pivmessilinam
  • Lexipen
  • Pivicil
  • Basilex
  • Flagyl etc.
এ সকল ঔষধ গুলো আমাশয় রোগের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। তবে এই সকল ঔষধ গুলো খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকগন উপযুক্ত আলোচনা থেকে আপনারা আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা এবং আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার ইত্যাদি বিষয় গুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। শুধু তাই নয় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কি ধরনের ঔষধ খেতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি আজকের পোস্টটা আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করতে পেরেছি। আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে। এজন্য আমাদের আর্টিকেলগুলো যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। যেহেতু এত কষ্ট করে আমাদের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন সেজন্য আপনাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url