বিটরুট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
বিটরুট ফলের উপকারিতা ও বিটরুট ফল কি? এটা কিভাবে খেতে হয় এবং বিটরুট ফল খেলে কি কি উপকার হয়। বিটরুট দিয়ে রুপচর্চা এরকম নানা ধরনের প্রশ্ন উত্তর আপনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। চিন্তা করার কারণ নেই আমরা আপনাদের কাছে বিটরুট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করব।
প্রিয় পাঠক গন বিটরুট ফল মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই বিট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে আপনারা মনোযোগ সহকারে আমাদের আর্টিকেলটি পড়বেন।আমরা বিটরুট ফলের উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব।
উপস্থাপনা ঃ
বিটরুট ফলের উপকারিতা ব্যাপক কিন্তু এই ফল অনেকেই পছন্দ করেন না। কারণ হলো অন্যান্য ফলের চেয়ে বিটরুট ফলের গন্ধ একটু অন্যরকম। তবে প্রত্যেকটা ফলের কিছু না কিছু গন্ধ রয়েছে। বিটরুট ফলের ও আলাদা গন্ধ রয়েছে। এই ফল বেশিরভাগ সময় শীতকালে দেখা যায়। বিটের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ যা আপনার স্বাস্থ্য কে ভীষণভাবে ভালো রাখবে। যাদের বাতের বেরাম রয়েছে তাদের জন্য বিট ভীষণ উপকারী ফল। বিট খেলে উচ্চ রক্তচাপ এবং দ্রুত ওজন কমায়। যেহেতু বিট উপকারী ফল এজন্য সবাই এটিকে খাবার হিসেবে বাবহার করে থাকে। বিটের মধ্যে রয়েছে আয়রন,পটাশিয়াম,আরো অনেকে পুষ্টিকর উপাদান। বিট খেলে আপনার শরীরের ক্যান্সার প্রতিশোধক হিসেবে কাজ করবে এজন্য বিটরুট ফল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা
বিটরুট ফল রুপ চর্চার জন্য খুবই উপকারী উপাদান। মানুষের অল্প সময়ের মধ্যে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তার মধ্যে কালসে দাগ,ব্রণ,পোড়া দাগ সহ আরো বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বিটরুট ফল খুবই কার্যকরী। বিটরুট ফল নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে।বিটরুট ফলের রস বের করে নরম তুলার সাথে ব্যবহার করে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। দেখতে পাবেন মুখের ব্রণ এবং কালসে দাগ আস্তে আস্তে কমে যাবে। তাই বিটরুট ফলের উপকারিতা অপরিশিম।
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
পৃথিবীতে সব ধরনের খাবারের কিছু নিয়ম রয়েছে। ঠিক তেমনি বিটরুট ফল খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। বিটরুট ফল কাঁচা রান্না করে দুইভাবেই খাওয়া যেতে পারে। বিটরুট ফল কাঁচা খেলে বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব। বিটরুট ফল জুস বানিয়ে বা সালাদ বানিয়ে খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে।যেহেতু এটি একটি সবজি জাতীয় খাবার তাই এটি বিভিন্ন সবজির সাথে মিক্স করে রান্না করে খাওয়া যায়।
বিটরুট দিয়ে লিপ বাম
খুব সহজে ঘরে বসে বিটরুট দিয়ে লিপ বাম তৈরি করা যায়। প্রথমে আপনি এক চামচ বিসওয়াক্স, নারিকেল তেল এবং আমন্ড অয়েল তেল নিয়ে খুব ভালোভাবে একসাথে মিক্সচার করে নিন। এবং এই মিশ্রিত উপাদান বিটের রসের সাথে ২-৩ ফোটা ভিটামিন ই অয়েল মিশে নিতে হবে। এবার এই উপাদানগুলো ছোট ছোট বাটিতে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।
এ মিশ্রিত উপাদান কয়েক ঘন্টা ফ্রিজে রাখার পর লিপ বাম তৈরি হয়ে যাবে। তাই আপনি এই পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজে ঘরে বসে লিপবাম তৈরি করতে পারেন।
বিটরুট জুস রেসিপি
খুব সহজে ঘরে বসে ব্যালেন্ডার এর মাধ্যমে বিটরুট ফলের জুস বানাতে পারেন। প্রথমে বিটরুট ফল কচি কচি করে অথবা ছোট ছোট টুকরা করে কেটে ফেলতে হবে। তারপর ব্যালেন্ডার এর মধ্যে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর ব্যালেন্ডার ঢাকনা খুলে বাকি সব উপকরণ দিয়ে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। আপনি চাইলে এই উপকরণের মধ্যে চিনি বা মধু মিক্স করে নিতে পারেন। এভাবে তৈরি হতে পারে বিটরুটের জুস রেসিপি। এই জুস খেলে মানবদেহের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
বিটরুট ফেসপ্যাক
বিটরুট ফলের ফেস প্যাক শরীরে ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। প্রথমে পরিষ্কার একটা বাটিতে মধু এবং লেবুর রস বিটরুট ফলের রসের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর বিটরুটের পেস্ট তৈরি করতে হবে। এবার এই মিশ্রিত উপাদান গুলো মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে।এরপর মুখের ত্বক পরিষ্কার ঠান্ডা পানির মাধ্যম ধুয়ে নিতে হবে। এটি ব্যবহারের ফলে আপনার মুখের ত্বক উজ্জ্বল বর্ণের দেখাবে। এভাবে নিয়মিত এই উপাদানগুলো মুখে লাগিয়ে ব্যবহার করতে পারলে। খুব দ্রুত মুখের রং উজ্জ্বল বর্ণের হয়ে যাবে এবং ত্বকের রং উন্নত হবে।
দীর্ঘমেয়াদী চোখের যত্ন
বিটরুট ফলের উপকারিতা চোখের জন্য খুবই উপকারী উপাদান। লাল বিট কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়।বিট ফল সিদ্ধ বা পরিপক্ক অবস্থার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বা লুকেইন নামে সবাই কাছে পরিচিত। লুকেইন বয়স সম্পর্কিত চোখের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। বিট ফল যেহেতু উদ্ভিদ উৎপাদিত যার মধ্যে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যাল এটি চোখের স্বাস্থ্য বা চোখের চারপাশে টিস্যু গুলোকে সুস্থ এবং সবল রাখতে সাহায্য করে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি চোখের যত্নের জন্য নিয়মিত বিট ফল খাওয়া খুবই জরুরী।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
মানুষের বয়সের সাথে সাথে শারীরিক দুর্বলতা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। কিন্তু নিয়মিত সঠিক খাবার খেলে শারীরিক দুর্বলতা অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। সে সকল খাবারের মধ্যে রয়েছে বিট ফল। নিয়মিত বিট ফল খেলে শারীরিক দুর্ব্যতা কমিয়ে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিট ফল আশ জাতীয় খাবারের মধ্যে পড়ে যা খাবারকে হজম করতে সাহায্য করে। নিয়মিত বিট ফল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কোলন ক্যান্সার এ ধরনের সকল রোগ থেকে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
বিটরুট এর উপকারিতা
পৃথিবীতে যত ধরনের উপকারী ফল রয়েছে তার মধ্যে বিটরুট ফল অন্যতম। কারণ বিটরুট ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা মানবদেহের রক্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এবং উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আনতে চেষ্টা করে। বিটরুট ফল খাওয়ার ফলে মাথার মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়মিত বিটরুট ফল খেলে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পরিমাণ মতো বিটের রস খেলে মানব শরীরের টক্সিন দূর করে ফেলে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এখানে ক্লিক করুন
বিট কি কাঁচা খাওয়া যায়
বিটরুট ফলের উপকারিতা মানব দেহের খুবই উপকারী একটি উপাদান। বিটরুট ফল অবশ্যই কাঁচা খাওয়া যায়। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে,বিটরুট ফল কাঁচা খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এজন্য নিয়মিত বিটরুট ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন।
বিটরুট দিয়ে চুল কালার
চুল হলো মুখের একটি সৌন্দর্য। চুলের রং করতে ভালো বাসেন না এমন লোক খুব কমই পাওয়া যায়।অনেকেই পাকা চুলের কালার করতে বিভিন্ন রসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকেন। যাতে করে চুল পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। আবার অনেকে হেয়ার স্টাইল হিসেবে চুল কালার করতে পছন্দ করেন। যেহেতু রাসায়নিক দ্রবের মাধ্যমে চুল কালার করলে ক্ষণস্থায়ী হয় এবং চুলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এজন্য প্রাকৃতিক ভাবে চুল কালার করার কোন বিকল্প নেই। বিটরুট ফলের রস দিয়ে খুব সহজে চুলের হেয়ার স্টাইল পরিবর্তন করতে পারবেন এবং পাকা চুল রং করতে পারবেন। এজন্য বলা হয় চুল কালার করার জন্য প্রাকৃতিক ভাবে বিটরুট ফলের উপকারিতা অত্যন্ত কার্যকরী।
বিটরুট এর বীজ বপনের নিয়ম
বিটরুট ফল বীজ ভপনের কিছু নিয়ম রয়েছে।
- প্রথমে বিটরুট বপনের জন্য ২০ ইঞ্চি দূরে আইল তৈরি করতে হবে । এরপর আইলের উপরে ২০ সেন্টিমিটার দূরে বীজ ২/৩ সেন্টিমিটার নিচে বীজ বপনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
- বিটরুট গাছের সংখ্যা গণনা করার জন্য পাশাপাশি দুটি গর্তের মধ্যে একটি করে বীজ বপন করতে হবে। এবং পরবর্তী ২০ থেকে ২৫ দিন পর ২০ সেন্টিমিটার দূরে একটি করে গাছ রাখতে হবে এবং বাকি যতগুলো গাছ আছে সকল গাছ তুলে ফেলতে হবে।
- যাতে করে অবশিষ্ট গাছগুলো ভালোভাবে বেড়ে ওঠতে পারে। এভাবেই বিটরুট ফলের বীজ বপন করতে হয়।
বিটরুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম
ইতিমধ্যে অনেকে জানেন যে ,বিটরুট কাঁচা এবং সবজির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। শুধু তাই না এটি সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। ঠিক তেমনি বিটরুট পাউডার হিসেবেও খাওয়া যায়। বিটরুট এর পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে হেলথ ড্রিংস হিসেবে পান করা যায়।
মানবদেহের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুন বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরকে ভালো রাখে। এভাবেই পানির সাথে মিশিয়ে বিটরুট পাউডার খাওয়া যায়।
বিটরুট বাংলাদেশের কোথায় পাওয়া যায়
বিটরুট ফলের উপকারিতা এতটাই বেশি যে,বিটরুট বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন এলাকায় এই ফল চাষ করা হয়। অনেকে বলেন বাংলাদেশে প্রথম চাষ শুরু হয় চুয়াডাঙ্গাতে। শুধু তাই না এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাতে এই ফল চাষ করতে শুরু করেছে চাষিরা। যেহেতু ৫০ গ্রাম ফলে ১৩০ টাকা বিক্রি হয় সেজন্য বাংলাদেশের চাষীরা এই ফল চাষ করতে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। এবং এই ফল ফলন হিসাবে খুবই ভালো। এটি বাজারজাত করা খুবই সহজ বলে চাষিরা এই ফলে ভালো লাভবান হচ্ছে। তাই এই বিট এখন বিভিন্ন জেলাতে চাষ করা হচ্ছে।
শেষ মন্তব্য
উপযুক্ত আলোচনা থেকে এটা বোঝা গেল যে, বিটরুট ফলের উপকারিতা অনেক। এই ফল খাওয়ার ফলে মানবদেহের হজম শক্তি,ডায়রিয়া,লিভার নিয়ন্ত্রণ, কোলন ক্যান্সার,মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সকল ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। শুধু তাই না এই ফল খেলে ত্বকের ব্রণ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়। আবার যদি বিটের গুঁড়া নিয়ে দু চামচ দইয়ের সাথে মিশিয়ে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করা যায়। তাহলে খুব দ্রুত মুখের ব্রণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। প্রিয় পাঠকগণ আমরা সব সময় আপনাদের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। আশা করি আমাদের এই পোস্টটি আপনার তথ্য উপযোগী হবে। আমাদের এই পোস্ট টি যদি ভালো লাগে তাহলে অবশই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url